সংযুক্ত আরব আমিরাতে জলবায়ু অভিঘাত মোকাবিলায় ক্রমবর্ধমান ব্যয় বৃদ্ধি মেটাতে একটি সমন্বিত সর্বজনীন অন্তর্ভুক্তিমূলক আন্তর্জাতিক অর্থায়ন ব্যবস্থা প্রণয়নের আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রীর পরিবেশ বিষয়ক বিশেষ দূত সাবের হোসেন চৌধুরী।
কপ সম্মেলনে অংশ নেওয়া বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের এ সদস্য ইউএনবিকে বলেন, জীবাশ্ম জ্বালানি নিয়ে এখানে যে শুনানি হচ্ছে তা থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় কোনোভাবেই তাপমাত্রা ১ দশমিক ৫ ডিগ্রির ওপর উঠে গেলে তা আমাদের সবার জন্যই ক্ষতির কারণ হবে।
তিনি বলেন, জাতিসংঘের মহাসচিব ২০৩০ সালের মধ্যে সব উন্নত দেশকে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার থেকে সরে আসতে বলেছেন। আমাদের মতো উন্নয়নশীল রাষ্ট্রগুলোর ক্ষেত্রে এই সময়সীমা বাড়তি থাকবে। তবে কী কী উপায়ে আমরা এই তাপমাত্রা বৃদ্ধি রোধে একসঙ্গে কাজ করতে পারি তা নিয়েও এই কপ সম্মেলনে আলোচনা চলছে।
বাংলাদেশ প্রতিনিনিধি দলের সদস্য ও পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রাণলয়ের সচিব ড. ফারহিনা আহমেদ ইউএনবিকে বলেন, জলবায়ু ঝুঁকিতে থাকা রাষ্ট্রগুলোর পক্ষে বাংলাদেশ সক্রিয় দাবি তুলে ধরেছে। কপ সম্মেলনের শুরুতে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের সদস্যরা বিভিন্ন সাইড ইভেন্টে অংশ নিচ্ছেন। বৈশ্বিক স্টকটেক, ক্ষয়ক্ষতি তহবিল, অভিযোজন লক্ষ্যমাত্রা, জলবায়ু অর্থায়ন ও অভিযোজন তহবিল বাড়ানোর বিষয়গুলোতে অগ্রাধিকার দেবে বাংলাদেশ।
আরও পড়ুন: কপ-২৮ এর আগেই জলবায়ু ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের সুপারিশ সংসদীয় কমিটির
সচিব আরও বলেন, কপ-২৮ সম্মেলনে উন্নয়নশীল দেশসমূহে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় উন্নত দেশগুলোর কাছ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত প্রতি বছর ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার প্রদান নিশ্চিত করা, জলবায়ু অর্থায়নের সংজ্ঞা চূড়ান্ত করা,অভিযোজন অর্থায়ন দ্বিগুণ করা, ক্ষয়ক্ষতি সক্রিয় করা এবং এর ‘ডিটেইল অ্যারেঞ্জমেন্ট’ ঠিক করা, অভিযোজন সংক্রান্ত বৈশ্বিক লক্ষ্য ‘গ্লোবাল গোল অন অ্যাডাপটেশন’ এর কাঠামো তৈরি বা প্রণয়ন বিষয়ে বাংলাদেশ জোরালো ভূমিকা পালন করবে।
তিনি বলেন, মুজিব ক্লাইমেট প্রসপারিটি প্ল্যানের অধীনেই প্রতি বছর বাংলাদেশের প্রয়োজন ৮ দশমিক ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও বেশি। আমরা উচ্চ কার্বন নিঃসরণকারী দেশ নই বরং এর অসহায় শিকার।
কপে অংশ নেওয়া পরিবেশবাদীরা বলছেন, দুবাই জলবায়ু সম্মেলন শুরুই হয়েছে ‘তহবিল’ বার্তা দিয়ে। তহবিল অবশ্যই জরুরি। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় বহু গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গীকার ও দাবি তহবিলের আড়ালে চাপা পড়ে যেতে পারে।
জলবায়ু প্রশ্নে এখন পৃথিবীর মানুষ ন্যায্যতার দাবি তুলেছে। তবে সম্মেলনের শুরু থেকে প্রতিদিনই জলবায়ু অর্থায়নের সারিতে যোগ হচ্ছে নতুন দেশ। আর এইসব অর্থায়নের বেশিরভাগই আবার বিনিয়োগ হিসেবে দেওয়ার প্রস্তাবও রয়েছে। অথচ বাংলাদেশসহ ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর দাবি ন্যায্যতার ভিত্তিতে ক্ষতিপূরণ।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ের এক্সপো সিটিতে চলমান জলবায়ু সম্মেলন (কপ-২৮) শুরুই হয়েছে তহবিল গঠনের অঙ্গীকার দিয়ে। সম্মেলনের প্রথম দিন থেকে শুরু করে সপ্তম দিনেও গুরুত্ব পেয়েছে তহবিলের বিষয়টি।
আরও পড়ুন: কপ-২৮: ৫ গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা সমাধানে অন্য দেশের সঙ্গে কাজ করবে বাংলাদেশ
বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের সদস্য ও পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পৃথিবীর তাপমাত্রা ইতোমধ্যেই ১ দশমিক ৪ ডিগ্রিতে চলে এসেছে। পৃথিবীকে বাঁচাতে হলে এটা ১ দশমিক ৫ ডিগ্রির মধ্যে রাখতে হবে। এই তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে সেটিকে আর কমানো যাবে না।
যে সমস্ত দেশ নীতি কথা বলছে, আইনের শাসন ও মানবাধিকারের কথা বলছে- তারাই জীবাশ্ম জ্বালালি খাতে বিনিয়োগ করছে। তাই তাদের বিরুদ্ধে জিততে হলে সারা বিশ্বের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে।
খাদ্য ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, বাসস্থান-চিকিৎসার ব্যয় বেড়েছে বলে শুরু থেকে গত বেশ কয়েকটি কপ সম্মেলনে বিভিন্ন রাষ্ট্রপ্রধানরা সম্মত হয়েছেন। অথচ ক্ষতিগ্রস্ত রাষ্ট্রগুলো সে তুলনায় কোনো ধরনের উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ দেখতে পায়নি।
তারা অভিযোগ করে বলেন, প্রতিটি সম্মেলনেই শুধু কথার পিঠে কথা থাকে। সম্মেলন শেষে আরেকটি নতুন সম্মেলনের অপেক্ষায় থাকতে হয়। কীভাবে এই পৃথিবীকে আরও বেশি বাসযোগ্য করে তোলা যাবে।
আরও পড়ুন: কপ-২৮: বিশ্বব্যাপী জলবায়ু প্রতিক্রিয়া ত্বরান্বিত করার আহ্বান
কার্বনের পরিমাণ কমানোর লক্ষ্যে পারমাণবিক শক্তি মূল ভূমিকা পালন করে বলে মনে করছে কপ-২৮ সম্মেলনে অংশ নেওয়া দেশগুলো।
সম্মেলনে মার্কিন জলবায়ুবিষয়ক রাষ্ট্রদূত জন কেরি বলেন, শক্তির অন্যান্য সব উৎসের চেয়ে এটি অন্যতম বিকল্প হতে চলেছে। তবে পারমাণবিক শক্তির ব্যবহার ছাড়া ২০৫০ সালের মধ্যে পরিবেশে কার্বনের পরিমাণ শূন্যে নামিয়ে আনাও সম্ভব নয়। এটি বিজ্ঞানভিত্তিক বাস্তবতা, এতে কোনো রাজনীতি বা মতাদর্শ জড়িত নয়।
দুবাইয়ে গত ৩০ নভেম্বর থেকে বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন-২০২৩ (কপ-২৮) শুরু হয়েছে। তা চলবে ১২ ডিসেম্বর পর্যন্ত। ১৩ দিনব্যাপী এই সম্মেলনে ১৯৮টি দেশের সরকার প্রধানসহ বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা অংশ নিয়েছেন।
কপ সম্মেলনে বিভিন্ন দেশের সরকার প্রধান, পরিবেশ বিশেষজ্ঞসহ সব শ্রেণির প্রতিনিধি বিভিন্ন ইভেন্টে অংশগ্রহণ করে নিজ দেশসহ জলবায়ু ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর প্রতিনিধিত্ব করছেন।
আরও পড়ুন: কপ-২৮: ৫ গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা সমাধানে অন্য দেশের সঙ্গে কাজ করবে বাংলাদেশ